রচনা:পল্লী উন্নয়ন

অনুরূপ রচনা : * গ্রামোন্নয়ন
* চলো গ্রামে ফিরে যাই
* বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়ন
* এসো দেশ গড়ি
* গ্রামোন্নয়নই দেশোন্নয়ন

রচনা সংকেত : ভূমিকা – পল্লী উন্নয়ন কী – পল্লীর অতীত ঐতিহ্য – পল্লীর বর্তমান চিত্র – পল্লী উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা – পল্লী উন্নয়নের উদ্যোগ ও পরিকল্পনা – পল্লী উন্নয়নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য – পল্লী উন্নয়নের সমস্যা – উপসংহার

ভূমিকা : সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র অবারিত পল্লীগ্রাম। বাংলার সারি সারি গ্রাম সুবিস্তৃত সবুজ পটভূমিতে সুসজ্জিত। ছায়াসুনিবিড়, শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলোকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে এদেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতি।

এদেশের শতকরা আশি জন লোক বাস করে পল্লীগ্রামে। পল্লীর উন্নয়ন ভিন্ন বাংলাদেশের উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না। তাই বাংলাদেশের উন্নয়ন-পরিকল্পনায় পল্লী উন্নয়নের গুরুত্ব অপরিসীম।

পল্লী উন্নয়ন কী :

পল্লী উন্নয়ন এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পল্লীর উৎপাদন, আয়, ভোগ, বিনিয়োগ, বণ্টন, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতির গুণগত মান ও পরিমাণগত উন্নয়নের কৌশলগত প্রচেষ্টা চালানো হয়।

পল্লী উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পল্লীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার সার্বিক উন্নয়নের দিকটি প্রাধান্য লাভ করে। এ উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় গ্রামীণ জনস্তরের সকলেই উন্নয়ন অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করতে পারে।

অর্থাৎ, ‘Rural Development means widescale participation of rural population in the modernization process.’ পল্লীবাসীর মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও স্বনির্ভরতা অর্জনের ক্ষেত্রে

পল্লী উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।

গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছের অফুরন্ত সম্ভারে ও সম্পদে এদেশের গ্রামবাংলা ছিল সুখ ও শান্তির জনপদ। ধনধান্যে পুষ্পে ভরা প্রাচীন বাংলার মানুষের অভাবের সঙ্গে পরিচয় ছিল না বললেই চলে।

পল্লীর অতীত ঐতিহ্য :

তাদের অনাড়ম্বর জীবনযাপনের মধ্যে ছিল শান্তির নিটোল ছোঁয়া। চাষী ক্ষেতে লাঙ্গল চালাতো, তাঁতি বসে তাঁত বুনতো, জেলে জাল ফেলে মাছ ধরতো, মাঝি নৌকা চালাতো, কুমোর হাড়ি-পাতিল গড়তো, বহুদূর প্রসারিত ছিল এদের বিচিত্র কর্মভার।

তারই ওপর ভর দিয়ে চলতো তাদের জীবন ও সংসার। পূজা-পার্বণ, যাত্রা-পাচালী, মেলা-খেলা, কুটির শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু মিলে পল্লীর সর্বত্রই বিরাজিত ছিল সুন্দর, সমৃদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ।

পল্লীর বর্তমান চিত্র :

ভোগ বিলাসময় আধুনিক সভ্যতা আবহমান বাংলার শান্ত-শ্রী জীবনে দুঃস্বপ্নের যবনিকা টেনে দিয়েছে। পল্লীর অতীত ঐতিহ্য আজ বিবর্ণ ও বিনষ্ট। পলাশী বিপর্যয়ের মাধ্যমে ইংরেজ বণিক সম্প্রদায়ের বাণিজ্য বিস্তার ও রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের সঙ্গে সঙ্গে বাংলার গ্রামজীবনের শান্ত-শ্রী সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধিতে ভাঙন দেখা দেয়।

কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়, কুটির শিল্প বিধ্বংস হয়। গোলা ভরা ধান আর গলা ভরা গান— সবই আজ বিবর্ণ স্মৃতি। দুঃখ-দৈনা, অভাব-অনটন আজ পল্লী জীবনের নিত্য সঙ্গী। এক সময় গ্রামকে বর্জন করেছিল ইংরেজ সৃষ্ট নব্য জমিদার শ্রেণী।

আজ শিক্ষিত উপার্জনশীল ধনী শ্রেণীও সপরিবারে গ্রামকে পরিত্যাগ করে শহরে আশ্রয় নিয়েছে। যাদের ক্ষুধার জ্বালা নেই সে সব শিক্ষিত ভদ্রলোক যদি গ্রামে বাস করতো তবে পল্লীর এত দুর্দশা ঘটত না। শহরমুখী সভ্যতা যত স্ফীত হচ্ছে পল্লী ও পল্লীবাসীর দুর্দশা ততই বাড়ছে।

পল্লীকে অবহেলা করে কেবল শহরের উন্নতিতেই দেশের সার্বিক সমৃদ্ধি ও শ্রীবৃদ্ধি হয় না। দেশের বৃহৎ অংশকে অবহেলিত রেখে কেবল শহরগুলোর উন্নয়ন সাধন করলেই দেশ সমৃদ্ধ হয় না। তাই গ্রাম-প্রধান বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে পল্লীর উন্নয়নকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। অশিক্ষা, কুসংস্কার, রোগ-ব্যাধি, বেকারত্ব প্রভৃতির কারণে পল্লীবাসীর জীবন আজ চরম দুর্দশাগ্রস্ত।

পল্লী উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা :

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বিগত সাড়ে তিনদশকে প্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নসহ পল্লী উন্নয়নে ব্যাপক কোনো অগ্রগতি সাধিত হয় নি। এ কথা সত্য যে, কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতির মূল কেন্দ্রবিন্দু পল্লী।

পল্লীর উন্নয়ন ভিন্ন দেশের সর্বজনীন উন্নয়ন সম্ভব নয়। পল্লী উন্নয়নের ওপরই দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি নির্ভরশীল। তাই যুগোপযোগী পরিকল্পনা ও কর্মপ্রেরণার মাধ্যমে পল্লীকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে হবে।

পল্লী উন্নয়নের উদ্যোগ ও পরিকল্পনা :

পল্লী উন্নয়নের মূল লক্ষ্য হলো গ্রামীণ জনগণের দারিদ্র্য নিরসন ও জীবনমান উন্নয়ন। বর্তমানে পল্লী উন্নয়ন পরিকল্পনাকে জাতীয় উন্নয়নের মুখ্য চাবিকাঠি হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। পল্লীর হারানো শ্রী ও গৌরব পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ উদ্যোগে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা এগিয়ে এসেছে।

কেবল সরকারের ওপর নির্ভরশীল থাকলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন বাস্তবে পরিণত হবে না। তাই উদ্যম ও আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে সঠিক লক্ষ্য ও পরিকল্পনার মাধ্যমে পল্লীসংগঠন ও পল্লী উন্নয়নে সর্বস্তরের জনগণকে অংশগ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প প্রভৃতির উন্নতি ও প্রসারতার মাধ্যমে পল্লী উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়। এক্ষেত্রে নিচের পদক্ষেপ ও কার্যক্রমগুলো গ্রহণ করা প্রয়োজন :

শিক্ষা কার্যক্রম:

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড ও উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। পল্লী-বাংলার অনগ্রসরতার মূল কারণ অশিক্ষা ও কুশিক্ষা। গ্রামের ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে নিরক্ষর রেখে কখনো পল্লী উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই গ্রামের মানুষকে শিক্ষিত করে তুলতে নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে ব্যাপক কার্যকর অভিযান চালাতে হবে।

গণশিক্ষা, অবৈতনিক শিক্ষা ও উৎপাদনমুখী শিক্ষা-কার্যক্রমের মাধ্যমে পল্লীবাসীর পশ্চাৎপদতা, অজ্ঞতা, কুসংস্কার প্রভৃতি দূরীভূত করে তাদেরকে দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করতে হবে।

কৃষির উন্নয়ন :

বাংলাদেশের পল্লীজীবন কৃষিনির্ভর। কৃষিই এদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু কৃষিনির্ভর পল্লী-বাংলার ঐশ্বর্যের ইঙ্গিত বহন করে। পাশ্চাত্যের শিল্প-বিপ্লবের ঢেউ এসে লাগবার পূর্ব পর্যন্ত পল্লী বাংলার জনজীবনে সুখ-শান্তি ও প্রাচুর্য ছিল। ঔপনিবেশিক আর্থ-রাজনৈতিক ব্যবস্থায় পল্লী- বাংলার জনজীবন আজ বিপন্ন। তার ধারাবাহিকতা এখনো চলছে।

কৃষির উন্নয়ন ব্যতীত পল্লী জীবনের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত হতে পারে না। তাই আধুনিক চাষপদ্ধতি, উন্নত বীজ, কীটনাশক প্রয়োগ, মৎস্য চাষ, গরু-ছাগল, হাস-মুরগি প্রতিপালন প্রভৃতির মাধ্যমে কৃষিব্যবস্থাকে সচল ও গতিশীল করে তুলতে হবে।

কুটির শিল্পের উন্নয়ন :

পল্লী-বাংলার কুটির শিল্পের অতীত ঐতিহ্য ছিল খুবই সমৃদ্ধ ও গৌরবময়। ইংরেজ আগমনের পূর্বে কুটির শিল্পই ছিল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম ভিত্তি। কিন্তু কুটির শিল্পের বর্তমান অবস্থা আজ অত্যন্ত নৈরাশ্যজনক।

গ্রামীণ আর্থিক দুর্গতি নিরসনে, বেকারত্ব দূরীকরণে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আমাদের বিলুপ্ত কুটির শিল্পকে আবার পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। আমাদের দেশে বৃহৎ ও ভারী শিল্প স্থাপনের আর্থিক সঙ্গতি ও সুযোগ যেখানে সীমিত, সেখানে কুটির শিল্পের নবজীবনায়নের সম্ভাবনাকে ফলপ্রসূ করে তুলতে হবে।

কুটির শিল্পের উজ্জীবন ও প্রসারে নিত্য ব্যবহার্য বিদেশী পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে এবং পল্লীবাসীরা তাদের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে পারে তাদের জীবনমান উন্নত হবে।

পল্লী জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন :

দারিদ্র্য এবং অপুষ্টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। পল্লী অঞ্চলের শতকরা ৭৫ জন শিশু অপুষ্টিজনিত স্বাস্থ্যহীনতার শিকার। পুষ্টিহীনতার কারণে বছরে ত্রিশ হাজারেরও বেশি শিশুকে অন্ধত্ববরণ করতে হয়।

ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার আক্রমণে মৃত্যুবরণ করে লক্ষ লক্ষ শিশু। পল্লীর অধিকাংশ গ্রামেই পানীয় জলের সমস্যা প্রকট। সাম্প্রতিককালে আর্সেনিক দূষণ গ্রামবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করেছে। দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতে সুস্থ-সবল ও উন্নত স্বাস্থ্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য। পল্লী উন্নয়নে জনস্বাস্থ্য সংরক্ষণে চিকিৎসা-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে।

জনগণকে স্বাস্থ্য সচেতন করতে হবে। হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং পারিবারিক স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র আরও সম্প্রসারিত করতে হবে। রোগ সম্পর্কে পল্লীবাসীর কুসংস্কার বিদূরিত করতে হবে। পাশাপাশি আধুনিক চিকিৎসা সম্পর্কে আগ্রহ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পরিচ্ছন্ন বাসস্থান, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটারি পায়খানা ব্যবস্থা প্রভৃতির মাধ্যমে পল্লীবাসীর স্বাস্থ্য সংরক্ষণে সকলকে যত্নবান হতে হবে।

জনসংখ্যার বিস্ফোরণ রোধ :

জনসংখ্যা সমস্যা বাংলাদেশ তথা বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের একটি ভয়াবহ সমস্যা। এ সমস্যার কারণ বহুবিধ। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে জীবিকা উপার্জন ও খাদ্য সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে।

বিপুল জনসংখ্যার অভাব পূরণের জন্য বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বিপুল জনগোষ্ঠীকে যেমন জনসম্পদে পরিণত করতে হবে তেমনি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

পাশাপাশি বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ রোধকল্পে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। আয়, সম্পদ ও জনসংখ্যার আনুপাতিক সমন্বয় সৃষ্টি না করতে পারলে দারিদ্র্য ও দুর্দশা থেকে পল্লীবাসীকে রক্ষা করা যাবে না।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন :

পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন অপরিহার্য। যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে রাস্তার গুরুত্ব অপরিসীম। রাস্তার সংস্কারসাধন ও পর্যাপ্ত নতুন রাস্তা নির্মাণের মাধ্যমে গ্রাম-গ্রামান্তর, হাট-বাজার ও শহরের সঙ্গে সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে হবে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা কখনোই অর্থবহ হয়ে ওঠে না।

পল্লী বিদ্যুতায়ন :

উন্মেষিত সন্ধ্যায় বাংলার পল্লীগৃহে এখনো প্রদীপের আলো জ্বলে প্রতিদিন। বাংলার প্রতিটি গ্রামে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছে নি। পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে পল্লী বিদ্যুতায়ন বিশেষ প্রয়োজন। প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎসুবিধা যথাশীঘ্র পৌঁছে দিতে হবে এবং বিদ্যুৎশক্তিকে কাজে লাগিয়ে গ্রামে গ্রামে ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তুলতে হবে।


ভূমিহীনদের পুনর্বাসন :

নদীভাঙ্গন, জনসংখ্যার চাপ, দারিদ্র্য প্রভৃতি কারণে এদেশের বিপুল সংখ্যক লোক ভূমিহীন।ভূমিহীনরা দেশের বোঝাস্বরূপ। এদেরকে পুনর্বাসিত করে উৎপাদনশীল কাজে সংযুক্ত করতে হবে।

স্বল্প সুদে ঋণ দান :

পল্লীর জনগোষ্ঠীর বিরাট এক অংশ দরিদ্র ও ভূমিহীন। এ দরিদ্র ভূমিহীন শ্রেণীকে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করে উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত করতে হবে।

সমবায় প্রবর্তন :

যৌথ কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে সমবায় প্রচেষ্টা। সম্মিলিত প্রয়াস—সাফল্য ও সম্ভাবনাকে বয়ে আনে। একতাই যে শক্তি তা সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে অনুধাবন করা যায়। তাই দরিদ্র পল্লীবাসীর

ভাগোন্নয়নে সমবায় পদ্ধতি চালু করতে হবে।

পল্লী উন্নয়নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :

বাংলাদেশে দারিদ্র বিমোচন ও জীবনমান উন্নয়নই পল্লী উন্নয়নের মূল লক্ষ্য। সরকারি পর্যায়ে এবং বেসরকারি পর্যায়ে গৃহীত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচি বিশ্লেষণ করলে উপযুক্ত সত্যটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির প্রচেষ্টা, স্থানীয় সম্পদের সদ্ব্যবহার, গ্রামীণ জনগণের শহরমুখী প্রবণতা রোধ, প্রাপ্ত সম্পদ ও সুযোগের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে উদ্বুদ্ধ করা, জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা, কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্যের পথ সুগম করা, গ্রামীণ জনশক্তির দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, শিক্ষার হার বৃদ্ধি, গণশিক্ষা প্রবর্তন, আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, পল্লী বিদ্যুতায়ন প্রভৃতি কার্যক্রম পল্লী উন্নয়নের উদ্দিষ্ট লক্ষ্য।

বস্তুত সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে গৃহীত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচি জাতীয় উন্নয়নের মূল স্রোতধারার সঙ্গে সংযুক্ত। পল্লী উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করার ফলে পল্লীজীবনে উন্নয়নের সুবাতাস বইতে শুরু করেছে।

পল্লী উন্নয়নের সমস্যা পল্লী উন্নয়ন ভিন্ন জাতীয় উন্নয়ন অসম্ভব। পল্লী উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে নানাবিধ প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। নিম্নবর্ণিত সমস্যাসমূহ পল্লী উন্নয়ন প্রয়াসকে নানাভাবে ব্যাহত করে আসছে। যেমন :

১. সুপরিকল্পিত ও সুবিন্যস্ত পল্লী উন্নয়ন নীতিমালার অভাব।

২. পল্লী উন্নয়ন সংস্থা ও সংগঠনসমূহের স্থায়িত্বহীনতা।

৩. অযোগ্য ও দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্ব।

৪. বিভিন্ন পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প থেকে প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধার অসম বণ্টন।

৫. স্থানীয় সরকারসমূহের প্রতি কেন্দ্রীয় শাসকগোষ্ঠীর অসহযোগিতামূলক মনোভাব।


৬. প্রাকৃতিক ও লব্ধ সম্পদের অপ্রতুলতা।

৭. পল্লী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং পরিকল্পনায় উচ্চবিত্তের আধিপত্য।

উপসংহার :

গোটা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পল্লীবাংলা যুগ যুগ ধরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশের শহরকেন্দ্রিক জীবনধারার পশ্চাৎভূমি বাংলার পল্লীগ্রাম। তাই পল্লীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সকলকে মনোযোগী ও আত্মনিবেদিত হতে হবে।

পল্লী উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়িত হলে বাংলার পল্লীজনপদ আবার তার অতীত গৌরবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে। পল্লীর জীবন আবার হয়ে উঠবে সুখ-সমৃদ্ধি ও শান্তির ছোঁয়ায় প্রাণবন্ত ও প্রাচুর্যময়।

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার
রচনাঃ বাংলাদেশের পাখি
মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার